সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা তাহিরপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ র‌্যাবের অভিযানে ভারতীয় ২৭২ বোতল মদ জব্দ যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তারা দেশের শত্রু : কয়ছর এম আহমদ প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’ দিরাই থানা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকের ফ্যামিলি গ্যাদারিং অনুষ্ঠিত জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে : কয়ছর এম আহমেদ জামালগঞ্জে উড়ালসড়ক প্রকল্প পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা তাহিরপুরে তোপের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শান্তিগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না, এই দেশ সবার : সেনাপ্রধান বর্ণাঢ্য আয়োজনে জন্মাষ্টমী উদযাপিত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবি সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদের ‘সাহিত্য আড্ডা’ অনুষ্ঠিত

পথে যেতে যেতে : পথচারী

  • আপলোড সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০৮:৩৬:১৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০৮:৩৬:১৪ পূর্বাহ্ন
পথে যেতে যেতে : পথচারী
সৈয়দ মুর্তাজা আলীকে আমরা হয়তো ভুলেই গেছি। তিনি ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী। উক্ত জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামে তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা। সৈয়দ মুর্তাজা আলীর জন্ম ভারতের করিমগঞ্জে। পিতা খান বাহাদুর সিকান্দার আলী ছিলেন একজন সাব-রেজিস্ট্রার। সরকারি চাকরি বদলিযোগ্য। তাই পিতার বদলির সুবাদে তাদের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতো। মুর্তাজা আলীও তা উপভোগ করতেন। এভাবে প্রচুর জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কথিত আছে ভ্রমণ হচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক জ্ঞান। তাই তিনি পিতার কর্মের সুবাদে বহু জায়গায় ঘুরেছেন। মুর্তাজা আলী ছিলেন খুবই মেধাবী। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও বরাবর ভালো ফলাফল করতেন পরীক্ষায়। মুর্তাজা আলীরা ছিলেন মোট ৩ ভাই, ১ বোন। ভাই-বোনদের সবাই ছিলেন মেধাবী। তিনি ছিলেন সবার বড়। দ্বিতীয় ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা আলী। এরপর সৈয়দ মুজতবা আলী। সৈয়দ মুজতবা আলী বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী লেখক। কনিষ্ঠ ছিলেন সৈয়দা হাবিবুন্নেছা চৌধুরী। তিনিও ছিলেন সাহিত্যিক। সৈয়দ মুর্তাজা আলী পিতার সিলেট কর্মের সুবাদে সিলেট গভ. হাই স্কুল হতে ১৯২১ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯২৩ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ হতে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর পিতার কর্মের সুবাদে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে সম্মানসহ পদার্থ বিদ্যায় বিএসসি পাস করেন। এ যাবৎ তার পড়াশোনার ফলাফল থেকে মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রচুর পড়াশোনা করতেন তিনি। তখনকার অত্যন্ত মর্যাদাবান পরীক্ষা আইএসসিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে, কী এক অজ্ঞাত কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কিন্তু, দমে যাবার পাত্র নন তিনি। চালিয়ে যেতে থাকলেন পড়াশোনা। পরের বার অংশগ্রহণ করেন আসাম প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়। সেখানেও তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এই পরীক্ষায় পাস করলে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং পদায়ন করা হয় মৌলভীবাজার জেলায়। এভাবেই শুরু হয় তার কর্মময় জীবন। তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবশেষে তিনি ১৯৫৯ খ্রি. বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত হন। সৈয়দ মুর্তাজা আলী একজন প্রতিভাবান মানুষ হয়েও বইয়ের নেশা তাকে বিভোর করে রাখতো। সাহিত্যমনা মানুষ ছিলেন তিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও সুযোগ পেলেই বই নিয়ে পড়তে বসতেন। তিনি প্রচ- রকম বিশ্বাস করতেন যে, একজন মানুষের জীবনে ৩টি জিনিসের খুবই প্রয়োজন আর তা হচ্ছে বই, বই আর বই। বাংলা একাডেমীতে সভাপতি পদে তিনি দুইবার নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রথম বার ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ এবং দ্বিতীয় বার ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। ১৯৭৪ খ্রি. এক বছরব্যাপী পালন করে এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি হিসেবে। একবার পিআইবি অর্থাৎ প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন সফলতার সাথে। প্রতিভাবান সৈয়দ মুর্তাজা আলী প্রচ- রকম কর্মব্যস্ততার মাঝেও লিখতেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয় তার প্রবন্ধ সংকলন ‘পশ্চিম পাকিস্তান’। তখন এদেশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান ছিল মহান ভাষা আন্দোলনে উত্তাল। এরই মধ্যে রচনা করেন দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ঞযব যরংঃড়ৎু ড়ভ ঔড়রহঃধ’। এরপর ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘ঞযব যরংঃড়ৎু ড়ভ ঈযরঃঃধমড়হম’। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘হযরত শাহজাহাল ও সিলেটের ইতিহাস’। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার কালের কথা’। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘মুজতবা কথা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’। তার এ সকল রচনা পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রতিভার মূল্যায়ন স্বরূপ তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অর্জন করেন ‘বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’। ১৯৮১-এর ৯ আগস্ট এই কৃতী সন্তানের মৃত্যু হয়। দেশ ও জাতি তাকে আজও স্মরণ করে তার কৃতিত্বের জন্য। আমরা এই মহান মানুষটির চির শান্তি কামনা করি। এ সকল প্রতিভাধর মানুষ যুগে যুগে জন্মগ্রহণ করেন না। আমরা তার জন্য গর্বিত।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা

লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা